জনসাধারণের ব্যবহারের যেকোনো সড়কে মোটরযান পরিচালনার জন্য আপনাকে অবশ্যই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নাগরিকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আপনাকে বিআরটিএ নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আবেদন শেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রার্থীর লার্নার বা শিক্ষানবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্সে (License) উল্লেখিত তারিখে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীকে কয়েক ধাপে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হতে হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পরীক্ষা সাধারনত ৩ (তিন) টি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়-
১. লিখিত পরীক্ষা
২. মৌখিক পরীক্ষা
৩. ব্যবহারিক পরীক্ষা
আরও পড়ুন: |
☞ অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের সহজ নিয়ম |
☞ লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়া |
আবার ব্যবহারিক পরীক্ষা বা ফিল্ড টেস্টের কয়েকটি ধরন রয়েছে। যেমন:
১. জিগজাগ টেষ্ট (Zigzag Test),
২. র্যাম টেষ্ট (Ramp Test),
৩. রোড টেষ্ট (Road Test),
৪. পার্কিং (Parking) টেস্ট।
নির্ধারিত তারিখে এই তিনটি পরীক্ষায় যে কোন একটিতে অকৃতকার্য হলে লাইসেন্স দেয়া হয় না।
১. ড্রাইভিং লাইসেন্সের লিখিত পরীক্ষা:
লিখিত পরীক্ষায় সাধারণত সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকে, যাতে স্বল্প কথায় উত্তর দিতে হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্সের লিখিত পরীক্ষায় উত্তর দেয়ার জন্য প্রত্যেক প্রশ্নের নিচেই ফাঁকা জায়গা থাকে এবং এখানেই প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়। এছাড়া সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন, সত্য-মিথ্যা ও শূন্যস্থান পূরণ থাকতে দেখা যায়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স এর লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ২০টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকে। এ প্রশ্নপত্রের পূর্ণমান ২০ নম্বর এর মধ্যে ১২ নম্বর পেয়ে পাশ করতে হয়। অর্থাৎ শতকরা ৬০% নম্বর পেলে উত্তীর্ণ হওয়া যায়। লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময় ২০ মিনিট।
লিখিত পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন সমূহ পেতে এখানে ক্লিক করুন
২. ড্রাইভিং লাইসেন্সের মৌখিক পরীক্ষা:
ট্রাফিক সাইন, ট্রাফিক নিয়মাবলী এবং মোটরযান ও ইহার ইঞ্জিন সংক্রান্ত প্রাথমিক জ্ঞান আছে কিনা তদুপরি বয়স ও শারীরিক দিক হতে উপযুক্ত কিনা এসব বিষয়ে মৌখিক প্রশ্ন করা হয়।
মৌখিক পরীক্ষার বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
৩. ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহারিক পরীক্ষা:
ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ব্যবহারিক পরীক্ষা বা ফিল্ড টেস্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এ ধাপে লাইসেন্স প্রত্যাশীকে বিভিন্ন ফিল্ড পর্যায়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। তবে বিআরটিএ (BRTA) এর জনবল ও অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্বল্পতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি এক বা দুই ধরনের পরীক্ষা আয়োজন করে থাকে। নিচে আমরা কয়েকটি ফিল্ড পর্যায়ের পরীক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করব:
জিগজাগ (Zig-Zag) টেষ্ট
এখানে AB=CD=EF=GH=IJ=KL [গাড়ীর প্রস্থের দেড়গুন] এবং BD=DE=EH=HI=IK [গাড়ীর দৈর্ঘ্যরে দেড়গুন ]
চালক প্রথমে AB প্রান্ত হতে গাড়ী ষ্টার্ট করে IJ-LK প্রান্তে পৌঁছাবে এবং ও স্থানে পার্ক করবে। পুনরায় পিছনের দিকে উল্লেখিত রুটে CD এবং AB প্রান্তে পৌঁছাবে। যদি আসা যাওয়ার মাঝে কোন পতাকার/খুঁটির সাথে ধাক্কা লাগে বা পতাকা/খুঁটি পড়ে যায় তাহলে অকৃতকার্য বলে গন্য হবে। আর এই কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে লাইসেন্স প্রার্থী এ পরীক্ষায় কৃতকার্য বলে গণ্য হবে।
কিন্তু মোটরসাইকেল বা বাইকের জন্য জিক জ্যাক টেস্ট এ কিছুটা পরিবর্তন লক্ষণীয় হল। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে সংযুক্ত ছবির A চিহ্নিত অংশ থেকে যাত্রা চারটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির ট্রান ও একটি ইউ (U) ট্রান নিয়ে পুনরায় B চিহ্নিত প্রান্তে পৌঁছাতে হবে।
এই প্রক্রিয়ায় পরীক্ষার্থীর পা মাটিতে স্পর্শ করলে কিংবা কোন খুঁটি বা পতাকায় ধাক্কা দিলে পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য বলে গণ্য হবে।
র্যাম্প (Ramp) টেষ্ট
জিগজাগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের র্যাম্প টেষ্ট দিতে হয়।
সাধারনত X প্রান্ত হতে শুরু করে তীর চিহ্নিত ১নং স্থানে থামাতে হবে এবং প্রয়োজনে পরীক্ষকের নির্দেশ মোতাবেক ইঞ্জিন বন্ধ করবে। পূনরায় ইঞ্জিন চালু করে পরীক্ষকের নির্দেশ মোতাবেক ১নং ঢাল (Slope) হতে ১নং গিয়ার লাগিয়ে উপরে উঠতে হবে। গাড়ী উপরে তোলার সময় যদি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় বা গাড়ী নীচের দিকে নেমে আসে তাহলে পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য বলে গন্য হবে অথবা র্যাম্পের কোন পাশে যদি গাড়ীর বডির সাথে ধাক্কা লাগে তাহলেও চালক অকৃতকার্য বলে গন্য হবে। অতএব X প্রান্ত হতে Y প্রান্তে পরীক্ষকের নির্দেশনা অবলম্বন করে পৌঁছাতে পারলে এই ধাপে কৃতকার্য বলে গণ্য হয়।
রোড (Road) টেষ্ট
জিগজাগ ও র্যাম্প টেষ্টে উত্তীর্ণ হবার পর রোড টেষ্ট দিতে হয়। এ টেস্টে পরীক্ষকের নির্দেশ মোতাবেক জরুরী ও স্বাভাবিক অবস্থায় গাড়ি থামিয়ে দেখাতে হবে।
এছাড়াও ওভারটেকিং (Overtaking) ও পাসিং(Passing) ইত্যাদি সহ রাস্তায় গাড়ি চালানোর বিভিন্ন নিয়ম ও সংকেত সমূহ পরীক্ষার্থী কতটুকু সঠিকভাবে অবলম্বন করছে তা যাচাই করে পরীক্ষক মার্কিং করবেন।
পার্কিং (Parking) টেস্ট
এ পার্কিং টেস্ট হলো ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ব্যবহারিক পরীক্ষার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মূলত বিআরটিএ এর অবকাঠামোগত স্বল্পতার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র পার্কিং টেস্ট করিয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে L সেইপের রাস্তায় বেক গিয়ারে গাড়ি পার্কিং করতে হবে। এক্ষেত্রেও রাস্তা প্রস্থ গাড়ির আকারের দেড় গুণ হয়ে থাকে। রাস্তার মাপের খুঁটি বা পতাকায় স্পর্শ না করে সঠিক নিয়মে গাড়ি পার্কিং করতে পারলেই ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহারিক এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে গণ্য করা হয়।
বৈধ প্রক্রিয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য অবশ্যই লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। তাই এই সব কয়টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে পাথওয়ে ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুলের ট্রেনিং মডিউল প্রস্তুত করে। ফলে প্রশিক্ষনার্থীরা খুব সহজেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে।
উল্লেখ্য, একই দিনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা ছাড়াও আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক্স ও ছবি সংগ্রহ করে থাকে বিআরটিএ।
আরও পড়ুন:
☞ অনলাইনে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন ও প্রাপ্তির প্রক্রিয়া
☞ ড্রাইভিং লাইসেন্সের লিখিত পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন ও সমাধান