গাড়িতে কেন আগুন লাগে, প্রতিকার কী ?

গাড়িতে কেন আগুন লাগে, প্রতিকার কী ?

 

কিন্তু কী কী কারণে গাড়িতে আগুন লাগতে পারে এবং কীভাবে আগুন লাগা থেকে গাড়িকে রক্ষা করা যায় এ বিষয়ে আমরা অবগত নই।


সম্প্রতি সময় গাড়িতে আগুন লাগার বিষয়টি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাড়িতে আগুন লাগার ফলে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হয়। কিন্তু কী কী কারণে গাড়িতে আগুন লাগতে পারে এবং কীভাবে আগুন লাগা থেকে গাড়িকে রক্ষা করা যায় এ বিষয়ে আমরা অবগত নই। তাই ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলছে ।

 

কি কি কারণে গাড়িতে আগুন লাগতে পারে?

 

গাড়িতে আসলে আগুন বিভিন্ন কারণে লাগতে পারে। তবে আমরা এই বিষয়টিতে নিম্নের কিছু বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি: 

১. ইঞ্জিন গরম হলে

 

আপনার গাড়ির প্রতি আপনার যতটা ভালোবাসা কাজ করে, আপনার গাড়ির ইঞ্জিনের যত্নেও কি আপনি মনোযোগী? আমাদের গাড়িটি প্রতিটি লম্বা সফরের পর একটু বিরতি চায়। কিন্তু আমরা আসলে ভুলে যাই এই ব্যাপারে। অতিরিক্ত গতি, লম্বা রুটে দীর্ঘ সময় ধরে চলার ফলে গাড়ির পিস্টন এবং পার্টসের মাঝে প্রচন্ড ঘর্ষন তৈরী হয়। ফলে গাড়ির ইঞ্জিন ধীরে ধীরে গরম হতে থাকে। এই গরম থেকে বাড়তে থাকে তাপ! বেশিরভাগ গাড়ির তাপ বৃদ্ধির ফলে ইঞ্জিন গরম হয় এবং গাড়িতে আগুন ধরে যায়। তাই আগুন লাগার পেছনে অন্যতম একটি কারণ এই ইঞ্জিনের হিট থেকে তাপ নির্গম হওয়া এবং ইঞ্জিন গরম হয়ে যাওয়া।

২. ফুয়েল ট্যাংক লিক হলে

 

ফুয়েল ট্যাংক গাড়ির অত্যাধিক প্রয়োজনীয় একটি পার্টস কিংবা অংশ। যেহেতু গাড়ির চালিকা শক্তি ফুয়েল ট্যাংক থেকে নির্গত হয়, এটির উপর বেশ বড় ধরনের ধাক্কা যায়। অন্যদিকে ফুলে হল এক প্রকার জ্বালানী এবং দাহ্য পর্দাথ। এটি যেকোন সময় স্পর্শকাতর আগুনের কাছে আসলেই ঘটে দুর্ঘটনা। একটি নির্দেশনা সবসময় মনে রাখবেন “আপনার ফুয়েল ট্যাংকের ছিদ্র আছে কি চেক করুন”। ফুয়েল ট্যাংকের যেকোন ধরনের ত্রুটি দেখলে কোন প্রকার আলসেমি কিংবা অগ্রাহ্য করবেন না। একটি মাত্র ভুল থেকে গাড়িতে আগুন জ্বলবে দাউ দাউ করে।

 

৩. গাড়ির ইলেকট্রিক ওয়ারিংয়ে ত্রুটি থাকলে

 

আমরা প্রায়সই গাড়ির সার্ভিসিং এর কারণে গাড়ি নিয়ে সার্ভিসিং সেন্টারে যাই। দুর্ভাগ্যবশত প্রায় আমাদের গাড়িতে যেসব মেকানিক ওয়ারিং ঠিক করেন তাঁরা কাজের প্রতি দায়িত্বশীল না। দেখা যায় তাঁদের কাজের সময় ওয়ারিং ঠিক মতো সেট আপ করে দেয় না। ফলে ঘটে যেতে পারে স্পার্কিং থেকে শক করে আগুন লেগে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা। এই ধরনের ঘটনা এখন প্রায়ই দেখা যায়। তাই গাড়্রি সার্ভিসিং সেন্টারে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর কোন কারণ নেই।

 

৪. ব্যাটারির ব্যবহার

 

আপনার গাড়ির ব্যাটারির একটি নির্দিষ্ট সাইজ এবং ভোল্টেজ ভ্যালু রয়েছে। এই ব্যাটারির আকার গাড়ি থেকে গাড়ি ভিন্নতর হয়ে থাকে। গাড়িতে ব্যাটারি একটু নির্দিষ্ট স্থানে সঠিক পরিধিতে বসানো থাকে। আমরা যদি মাত্রারিতিক্ত বড় সাইজ কিংবা খেয়াল-খুশি মতো ব্যাটারি গাড়িতে লাগাই, তবে ব্যাটারির পজিটিভ টার্মিলার যদি কোন কারণে বেয়োনেটের সাথে যুক্ত হয় তবে তা আগুন লাগার কারণ হিসেবে যথেষ্ট বড় ভূমিকা পালন করবে।

আপনার অজান্তেই এই বড় ধরনের দুর্ঘটনাটি ঘটে যেতে পারে যেকোন সময়ে। ব্যাটারি নির্ধারিত সাইজে ব্যবহার করুন এটি আপনার ইঞ্জিনের জন্যেও ভালো ফলাফল প্রদান করবে। এছাড়াও সাধারণ সময়েও গাড়ির ব্যাটারির যত্ন নিয়ে ভুলবেন না।

 

৫. অতিরিক্ত ভোল্টেজের হেডলাইটের ব্যবহার

 

কথায় বলে “প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কিছুই ভালো না” তা হোক গতি কিংবা হেড লাইটের ভোল্টেজ। কিন্তু বর্তমানে বেশি আলো পেতে গাড়িতে এল ই ডি বাল্ব ব্যবহার করা হয়। নির্দেশনা অনুসারে গাড়িতে ৬০ ওয়াট পর্যন্ত হেডলাইট ব্যবহার করা নিরাপদ, অথচ উচ্চ মাত্রার লুমেন্সের হাইল্যাম্পের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। অনেকেই ২০০ ওয়াটের কাছাকাছি আলো ব্যবহার করে থাকে গাড়িতে।

সাধারণত গাড়ির হেডলাইটকে ঠান্ডা রাখতে কুলিং ফ্যান ব্যবহার করা হয়। কিন্তু নিম্ন মানের আলোতে কুলিং ফ্যান না থাকায় লাইটিং সিস্টেম গরম হয়ে যায়। আর এটির প্রভাব ফিউজ বক্সে গিয়ে পড়ে। গাড়ির ফিউজ বক্স থেকেই মাত্রাতিরিক্ত ভোল্টেজের কারণে আগুন লেগে যেতে পারে।

৬. অপরিষ্কার কুলিং ফ্যান

 

গাড়িকে ঠান্ডা রাখতে কুলিং ফ্যানের জুড়ি নেই। আপনার ইঞ্জিনের রেডিয়েটরের পানিকে ঠান্ডা রাখতে কুলিং ফ্যান কাজ করে থাকে। কিন্তু আমাদের গাড়ির কুলিং ফ্যান প্রায়সই ধুলাবালির স্পর্শে অপরিষ্কার হয়ে যায়। এই সময়ে কুলিং ফ্যান যদি ঠিক মতো কাজ না করে তবে ইঞ্জিন হয়ে যেতে পারে।

 

৭. ক্যাটালিক কনভার্টার থেকে আগুন

 

আপনার গাড়িতে থাকা ক্যাটালিক কনভার্টার এক্সস্ট গ্যাসের ক্ষতিকর পদার্থগুলোকে কয়েকটি ধাপে বিক্রিয়ার মাধ্যমে গাড়ি থেকে বের করে দেয়। এই ধরনের বিক্রিয়াগুলো করার সময় গাড়িতে ১২০০-১৬০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপ উৎপন্ন হয়। গাড়িতে থাকা স্পার্ক প্লাগ, অক্সিজেন সেন্সর, ইগনিশন কয়েল ইত্যাদির ত্রুটির কারণে যদি ইঞ্জিনে ইঞ্জিন নকিং হয় তবে এক্সস্ট গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। এমন কি তাপমাত্রা ২০০০ ডিগ্রীর উপরে চলে যেতে পারে। এই হিট থেকে গাড়িতে আগুন লেগে যেতে পারে।

 

আগুন থেকে প্রতিকার

 

গাড়িকে আগুন থেকে রক্ষা করতে নিম্নে দেওয়া কিছু বিষয় লক্ষ্য রেখে গাড়ি চালানো যেতে পারে। এতে করে দুর্ঘটনা ঘটার প্রবনতা অনেকাংশ কমে যেতে পারে।

গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গাড়ি সুরক্ষায় অনেক ধরনের নিয়ম-কানুন প্রদান করে থাকে। আপনি চাইলে আগুন থেকে রক্ষা পেতে এসব নিয়ম অনুসরণ করে যেতে পারেন।
হেডলাইটের ব্যবহারে ভোল্টের মাত্রা নিশ্চিত করুন। অতিরিক্ত লুমেনের লাইট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
ইঞ্জিন ওভার হিট হলে গাড়ি রাস্তার একদিকে রেখে ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
গাড়িতে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক পার্টস যুক্ত করতে হলে ভালো টেকনেশিয়ানের শরনাপন্ন হন। এবং সাবধানতা অবলম্বন করুন।
গাড়ির ইঞ্জিনকে ঠান্ডা করতে কুলেন্ট ব্যবহার করুন। এটি ইঞ্জিনে শীতলতা প্রদান করে।
গাড়িতে কোন সিএনজি বা এলপিজি গ্যাসের গন্ধ পেলে সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে গাড়ি চেক করুন।
নিরাপত্তার স্বার্থে গাড়িতে অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র বা ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখতে পারেন।

শখের গাড়িতে আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্তই জরুরী একটি বিষয়। আর আগুন লাগার মতো ভয়ংকর ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকতে, উপরের বিষয়গুলোতে লক্ষ্য রাখুন।আপনার সচেতনতাই পারে আপনার ভ্রমনকে নিরাপদ করতে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *